DEHLIJ

কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

বুরুঞ্জি-বুরাস - এপিসোড--নীল পাইন

কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য



মেঘের কারখানার ঠিক পাশ ঘেঁষে নীল সরলগাছ দের ঠেক।বৃষ্টির উড়ালপুল পেরিয়ে পাহাড় এখন সাদা সরতাজ্ খুলে রেখেছে।হার্স ব্লু আকাশ রোদে পিঠ দিয়ে পাইনের সোয়েটার বুনছে নিজস্ব কুর্শিকাটায়--উল্টা সোজা--সোজা উল্টা--বেশ ঠাস বুনোন।হাওয়া গাড়ির কাঁচ জানালায় নাগরিক ফেসকাট সানস্ক্রিন বুলোয় শরীর-ত্বকে-কবিতা র খাতা কোল টপ বাক্সে এইসব বেত্তান্ত--ওয়েডিং রিং এর হীরে রোদ চমকায়--১০টি শাখামৃগ যূথবদ্ধ ক্ষিপ্রতায় সিনথেটিক জলবোতল গুপি করে ওক গাছের আধো সবুজ ডালে তেষ্টা মেটায়--বেড়াতে বেরিয়ে ও বাক্স-বোঝাই সাপের খোলস,নীল ঝুমকা, আইভরি চিরুণী--তীক্ষ্ণ রোদে গঙ্গা র জলে পোড়া চিতা ভষ্ম--অনল আয়তি মুখ --মোহানা কিংবা সাগরের সঙ্গম কামী অস্থিরতা য় ভেসে ভেসে ঢেউ জাগায়---সুনসান পার্কে ওজিমানদিয়াস পুড়ে ঝামা হতে হতে আ্যসাইলামের দরোজা ভাবেন।

কটেজগুলো নদীর কোল ঘেঁষে--নদী টিও পাইন --ওক এর সঙ্গে ছূপাছুপি খেলতে খেলতে একটি নিঃসঙ্গ পালক কুড়িয়ে নিল--পালকটির সাথে চলতে চলতে কিছু তুলো--পালকটির গায়ে লেপ্টে রইলো--চাঁদ জোছনা মাখতে মাখতে পালক টি র গায়ে মেটামরফোসিস --জল পালক--ভাসতে ভাসতে বরবর্ণিণী গঙ্গা সঙ্গম--

এইসব কটেজগুলো তে কতো মেক আপ,ফ‍্যাসিয়েল,

সংলাপ নদী, আর পাহাড়ের--ঠিকমতো সাজাতে সাজাতে গল্প যেনো।

রাত পার্টি--দোলনায় চাঁদ দোলে--কখনো সফ্ট মিউজিক কখনো ঝিঝিং প‍্যাং

--হোয়াই আর য়ূ সো ওরিড?

ম‍্যাঁয় নে অভি এ্যয়সা কাম নেঁহি কিয়া--

টেক ইট ইজি

আমার টাকার খুব জরুরত্--আমার স্বামী খুব অসুস্থ--

হাউ ফানি।শরীর  বেচা টাকায় আদমি র ট্রিটমেন্ট।

সংলাপ গুলো পাহাড়ে পাহাড়ে লাট খায়---রাহী গাড়ি আরো উঁচু তে উঠতে উঠতে ভূত কাল রি কনস্ট্রাকশন করে


এপিসোড--কালুডান্ডা---

সিপাহী বিদ্রোহ এর ঘোড়া ঘন পাইনের জাঙ্গাল পেরিয়ে ইতস্ততঃ---। একটি ছোট্ট চিঙারি থেকে আগুনের মালা নীল পাইনের গলায়। লালমুখো সায়েব বারুদের মশাল জ্বেলে খুঁজতে থাকে ইতিহাস, তাল তাল সোনা রং আদিবাসী লোকগাঁথা-পাইনের শণের নুড়ি চুলের জট খুলে খুলে শতাব্দীর দরোজা বানায়--সূর্যাস্ত বিন্দুর গোপন সিঁদুর কৌটা খুলে লাজলি রঙ ছড়িয়ে পড়া আকাশ--কালু সর্দার হারে রে রেরে ডাক ছাড়ে-হাতে পাকানো লাঠি--মাউন্টেন ছাগল বালিকা র হারানো ছাগল ছানা কোলে হিমালয় সাদা দাঁত হাসে--যাযাবর মেঘেরা ভয়াবহ ঝড়ের আশঙ্কা য় --বন্দুক কাঁধে সাদা সাহেব --ফিষ্টির জন‍্য নধর ছাগশিশু খুঁজতে খুঁজতে কালু সর্দার এর লাঠি রণ পা হয়ে পাকদন্ডী পথে--অলৌকিক ছায়ায় ওক এর গায়ে--বালিকা র কোলে আরামে চোখ বুজে ছাগশিশু।

সারাদিন বরফের মতো ভালবাসা --কালু সর্দার দের দিন ফুরিয়ে আসে--

লেট ইট বি রি নেমড।

টিপস্ এন্ড টপস

পাহাড় এর কোল ঘেঁষে পাইন আর ওক এর বাংলো

ল‍্যান্সডাউন।

ওরা শিকল পরে পায়--ওদের অরণ্য কেটে স্নানঘর,আস্তাবল,রসুইখানা;ওদের স্বরলিপি খুলে ডো রে লা--বিহানকথা র পাঁচালী র উপর পল সাহেবের বাইবেল এর অক্ষর গুলি কালু ডান্ডা র বাটন টিপে সেজে গুজে ওঠে--রূজ,শস্তা লিপস্টিক ,ঘাঘরা চোলি হোর ওক গাছের পাতায় শ্রান্ত চোখ মোছে।

আমার পর্যটক চোখ মেলে দিই সবুজ গাছেদের চোখে,কোয়েলের পঞ্চম সুর আমাকে সেই পুরাতনী গল্প বলে--সাহেবের গোসলখানা,সাদাঘোড়ায় মেমসাহেবের বিবিয়ানা, মিশি বাবার খেলনা ঘর--

কালুডান্ডা র ল‍্যান্সডাউন এর মেটামরফোসিস।

একদিন সভ‍্যতার আঙুল গুলি পড়িয়ে দিল ওদের খেতবাড়ি--খড়ো চালের প্রজাপতি বিলাস--পীচ করা ধাতব রাস্তায় হাওয়া গাড়িদের জটলা--সোশ‍্যাল টেররিষ্ট নেটওয়ার্ক একে একে হত‍্যা করলো ফুল,পাতা,ওক গাছের শালীনতা---আকাশের স্তব্ধতা।মালবাহী খোরসানী লরি থেকে ছিটকে পড়লো কাশ্মীর কী কলি,আনারদানা,বাগদাদী কার্পেট--ডিজেলের কালো ধোঁয়ায় নীল পাইন কোন গুলো ক্রমাগত বিষস্তম্ভ---


এপিসোড--শতাব্দী দ্বার--যাদুঘর--যুদ্ধ


"দেয়ার ইজ নট্ টু রিজন হোয়াই

ওনলি টু ডু ওর ডাই-"

এখানে জমাট বরফ কান্না---এখানে মৃত্যুর বিজয়স্তম্ভ।প্রাত‍্যহিক প‍্যারেডের রোবটিক আ্যরোবিকস--সীমান্ত চিহ্নিত একটি লাইন নিয়ে টাগ অব্ ওয়ার।কর্কশ রোদের ফ্লাই পাষ্ট ,সূর্যের গ্লোরিয়াস ডাইভ,হলুদ আর সবুজ এর ওড়না মাথায় লেমন ইয়েলো গাড়ি থেকে যাদুঘর--কয়েকটি পদক্ষেপ মাত্র।ছবিতে একজন ব্রিগেডিয়ার--ছবিগুলো এমন ক্লিক যেনো পেছন থেকে একটি আলোকিত বলয় মুখকে ঘিরে রেখেছে   -ব্রিগেডিয়ার বিজয় মোহন ভট্টাচার্য--সন ১৯৬২--নর্থ ইষ্টের বমডিলা--

--"বমডিলা লই যাবা নি

চিনার যুদ্ধ চাবা নি

চিনায় যদি গুল্লি মারে

বুকু পাতি লবা নি??"

সন ১৯৬২---নিশ্চিত পরাজয়--জেনে ও

ক‍্যানন টু রাইট অব্ দেম

ক‍্যানন টু লেফট অব্ দেম--

--চার্জ।চার্জ। চার্জ।

বিজয় মোহন এর ব্রিগেড বমডিলা সীমান্তে বন্দি ,পরাজিত সৈনিক---ঠান্ডা বরফ  অথবা হার্স চৈনিক ল‍্যান্ডস্কেপে বিজয় মোহন ভট্টাচার্য এবং তাঁর পরাজিত সৈনিক রা মাতৃভূমি র ডেডিকেটেড রক্ষী।বিদেশের মাটিতে অনেকেই মাটি নিলেন--দীর্ঘদিন অত‍্যাচারিত হয়ে অবশেষে মুক্তি র সরোদ বেজে উঠলে বিজয় মোহন পরমবীর ,অশোকচক্রের শিরোপা --মেডেলে কাঁচের আলো---নিশ্চিত মৃত্যু জেনে ও যে সৈনিক এগিয়ে যায়--বারুদ,রাইফেল,কামান এয়ার বোম্বিং উপেক্ষা করে--তাঁর কন্ঠে অশোকচক্রের শিরোপা--ধুলো মাটি র সীমান্ত পিছলে যায়,যাদুঘরের ঝাড়লন্ঠন,ধ্বংস প্রক্রিয়ার ভেতর থেকে এক বীরগাঁথা।ইউক্রেন-রাশিয়ার সীমান্ত এই মুহুর্তে এখন এমনই বারুদ ঠাসাঠাসি-এমনই অনেক ব্রিগেডিয়ার বিজয় মোহন লং মার্চে নিশ্চিত মৃত্যু র দিকে হেঁটে চলেছেন--অনেক মানুষেরা নিজের দেশের কাঁটাতার পেরিয়ে পরভূমের ট্রানজিট ক‍্যাম্পে--বিজয় মোহনদের প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে তখন নেমে আসছে নরকগামী মেঘেদের আড়াল থেকে আবছা সন্ধ্যা--বিজয় মোহন দের বাগানে সেই আশ্চর্য সন্ধ্যায় ফুটেছে থোকা থোকা গুলমোহর,অমলতাস,বাগান বিলাস--রেড রোজ আর বুরাস।বিজয় মোহনদের মা অথবা প্রেমিকা পশ্চিম দিগন্তে র আশ্চর্য মৃত্যু সন্ধ্যা দেখতে দেখতে এক খুন খারাবি রঙ দেখে শিউরে ওঠে--বিজয়মোহন দের কচি ছাওয়াল মার স্তনে মুখ গুঁজে ভালবাসা র ওম খোঁজে--বিজয়মোহনরা তখন বরফের পাহাড় ভেঙে সীমান্ত চিহ্নের জন্য শহীদ হবার স্বপ্ন দেখছেন---ঝকঝকে সূর্য বেয়নেট এ ঝলসে ওঠে---হাফ আ্য লিগ।হাফ আ্য লিগ হাফ আ্য লিগ ওন ওয়ার্ড।---

সূর্যাস্ত বিন্দুতে তখন শাম ঢলে।।


এপিসোড--কালেশ্বর-সেন্ট জোনস,সেন্ট মেরিস--চরৈবেতি


থোকা থোকা রক্ত বুরাস--পাতাগুলি রক্ত পরেছে অথবা লাল আলতা পা--ঘুঙুর নটিনী বনপথ তারকেশ্বর--বাঘছালে ভিখারি হাত পাতেন অন্নপূর্ণা র কাছে--গন্ধধূপ হিমালয় বাতাস বাহী ছড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের খাঁজে--খাপ খোপরে--লন্ঠন বাহারী প্রদীপের উপর--চিমনি ঘন কালো।ত্রিশূলগাছ সটান আকাশ গামী--ধ্বংস কামী রাস্তা গুলো সেনানায়কের মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ঝলসানো পাইন,দস্তানা,কাঁটা চামচের বৃত্ত থেকে কোনো পাথর রমণীর দিকে।

মৃত্যু লিখতে লিখতে উত্তরণের ঘটস্থাপনা--গুগগুল,ধূপ এর হোমাগ্নিতে--ওম্ স্বাহা।ওম্ নম শিবায়ঃ--অথচ আমি দেখি না নাভি কুন্ড ঘিরে জল্লাদের খড়্গ ঝলসায়--বিল্বপত্র কালো বিষধোঁয়ায়--আমার শুধু বুক ভরা।ঘৃণা আর দহন।এই ঘৃণা আর দহনে পুড়ে।পুড়ে তুলসী পাতার মতো পবিত্র হতে চাই আমি--পিক আ্যন্ড পাইন সরাইখানা য় রাত্রি বাসের পর ভোরের লাল আলোয় আমি কাঁচঘরের দরজা ,জানালা খুলে দিই--হিমালয় এর গম্বুজ এর আড়াল থেকে টুকি খেলছে জবাকুসুম সূর্য--পৈড়ি গাঢ়োয়ালের হিমালয় রেনজ্ ভোরের আবীর ছড়িয়ে জেগে উঠছে--সেন্ট জোনস পাথরের স্তব্ধতা য় যীশুর বালক কন্ঠ--লেট দেয়ার বি লাইট--আ্যন্ড দেয়ার ইজ্ লাইট

কালেশ্বর মন্দিরের শঙ্খ ধ্বনি র সাথে মিশে যাচ্ছে আজানের সুর--গুরদোয়ারার শান্ত জলে হিমালয় এর মুখ--আমি পাহাড় ভাঙি

আমি দোয়া মাঙি

আমি কান পেতে সেন্ট মেরিস চার্চের শতাব্দী প্রাচীন দেয়ালে ঘন্টা ধ্বনি র সাথে উপনিষদের সুর শুনি

ইশাবস‍্যং ইদং সর্বং---


আমি ফেলে দিই আমার জন্ম পরিচয় এর উত্তরীয়

আমি ছিঁড়ে ফেলি আমার বর্ণাশ্রমের প্রতীক চিহ্ন

আমি খুলে ফেলি আমার আজন্ম পালিত ঘোমটা র লাজ আবরণ

আমি হিমালয় এর ভোরের বাতাসে কুচি কুচি করে উড়িয়ে দিই জন্ম পরিচিতির কার্ড

আমার ভিখারি জীবনের সার্টিফিকেট

আমার যাবতীয় দেশ কাল জীবনের যাপিত আইডেন্টিটিস

আমি পাইনের ঘন বনের সরু পথধরে ক্রমশঃ চড়াই ভাঙি

আহ্--পথের দুধারে থোকায় থোকায় নক্ষত্র মালার মতো

লাল রক্তমাখা নবজাতক শিশু র মতো

অজস্র বুরাস---আমি বুরাসের জঙ্গলে হারিয়ে যাই---


2 comments:

  1. তুমি সর্বদা দারুণ, ঝরঝরে এবং নতুন আঙ্গিকে লেখো

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ

      Delete

FACEBOOK COMMENT