DEHLIJ

তন্ময় ধর

 তন্ময় ধরের কবিতা

 তন্ময় ধর



‘অপাং মধ্যে তস্থিবাংসং তৃষ্ণাবিদজ্জরিতাং’

অনেক রঙের অন্যমনস্কতায় একটা নৈঃশব্দ আমাদের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। পথ প্রাগিতিহাস হয় নি, আমরা শুধু গল্প থেকে ভেঙে নিচ্ছি ধূসর ও নির্মম বাদাম। সবুজ স্বাদ থেকে মৃত সন্তানের গন্ধ মুছতে মুছতে আমাদের আঙুলের ছাপ স্থির হয়ে আছে। স্থিরত্ব থেকে অরুন্ধতী তারার রাত্রি ঢুকে পড়ছে তোমার গর্ভনালীর রক্তশূন্যতার অন্ধকারে। সে শরীর ভাল নেই। ল্যাটেরাইটের নিমগ্ন অন্তর্লেখ থেকে এক নাস্তিক রঙে আমাদের ভিতর মাংস কাটছেন ঈশ্বর। 

আমরা সন্তানের মৃত্যুর দিকে হাঁটছি। গরুড়গঙ্গার সন্দিগ্ধ জল থেকে ঈশ্বর হয়ে উড়ে যাচ্ছে কোল্ড ড্রিঙ্কসের পাউচ। আমাদের মাংস-ভাতের ভেতর লুকিয়ে রাখা গল্পটা শোনাতে শোনাতে মৃতপ্রায় সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে রাখছি। যৌনতার ভিতর একটি শব্দের কঙ্কাল থেকে চমকে উঠছি আমরা। শস্য কাটছে আমাদের অভিশাপ।  

জিওমর্ফোলজির ক্লাসে ঈশ্বর চুপচাপ বসে আছেন। আমরা ক্লাসনোট নিতে পারছি না। হাত কাঁপছে অন্য রঙের আলোয়।  

  

 ‘ক্রত্বঃ সমহ দীনতা প্রতীপং জগমা শুচে’

মাছের শরীর ক্রমশ হালকা হয়ে আসে তোমার-আমার ভেতর। জলের দারিদ্র্য একটু একটু করে শব্দ তুলে নেয় আমাদের অন্ধকার থেকে। সে শব্দ মাছের খাবার, সে শব্দ অ্যাকোয়ারিয়াম, সে শব্দ শ্যাওলা, সে শব্দ সন্তানের কঙ্কাল। আলোর টাইমটেবিলে আমরা বহুযুগ বসে আছি শীতল জলের অপেক্ষায়। 

এক নম্বর প্লাটফর্মে কেউ লালন সাঁইয়ের গান গাইছে। ভাঙা নৌকায় জল সেঁচার গান। ভেন্ডার কামরার আঁশটে গন্ধে চুপ করে আছে মেডিক্যাল রিপোর্ট। জানালার ভেজা কাঁচে মুখহীন ফেরিওয়ালা। মাল্টি-অরগ্যান ফেলিওর। ক্যামেরার দীর্ঘতম শটে পা কাঁপছে জাঁ রেনোয়াঁর। নখ কাঁপছে।  

পরিত্যক্ত খেলনায় তখনও কাদামাটি লেগে রয়েছে। শুকনো শব্দের মতো ভেঙে যাচ্ছে শিশুনখ, স্পর্শের ছায়াচিৎকার। ক্লান্ত ডিভাইডার থেকে উঠে আসছে নতুন শব্দ। শব্দের উত্তাপ থেকে আমরা ঘুরেই চলেছি ভুলভুলাইয়ায়। 


‘যদেমি প্রস্ফুরন্নিব দৃতির্নধ্মাত অদ্রিবঃ’

আমাদের খাদ্যের টুকরোর ভিতর থেকে শিশুসুলভ একটা ব্যথা আমাদের ডাকল। সব ওষুধ ফুরিয়েছে তখন। তার চিরসবুজ খেলার মাঠের পাশ দিয়ে আমরা ছুটলাম। ছুটে খিদেও পেল। খিদের পাশ থেকে অস্পষ্ট মৃত্যুদেবতা কথা শুরু করল আমাদের ইতিহাসের সাথে।

সেই শিশু উলটো করে ধরে রেখেছে ইতিহাস বই। এক একটা অক্ষর রঙ পালটে তীব্র চিৎকার করে ভেঙে দিচ্ছে ভোরের স্বপ্ন, চা ও ডিম-টোস্ট। স্বাদহীন জিভের শেষ প্রান্ত থেকে শিশুখাদ্যের ভেতর হাঁটছে তোমার অন্ধকার।

শব্দের ভেতরে এক বোবা কান্নার জন্ম হয়। কান্নার পাশেই অন্য শব্দের খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়।  


‘মৃড়া সুক্ষত্র মৃড়য়’


এর আগেও আমাদের প্রতিবিম্ব জুড়ে পাখি ছিল, তরুক্ষীর গন্ধের কাহিনি ছিল। নষ্ট শিশুখাদ্যের আড়াল থেকে ঈশ্বর অপলক দেখেছিল আমাদের অভিনয়। তোমার মুখের রঙে তখন মৃত্যুর ভিডিও ডাউনলোড করে ফেলেছে সময়। 

পায়ের ছাপের উপর দিয়ে তখন আমরা মহাসমুদ্রে বেড়াতে চলেছি। ঢেউ এবং শঙ্খচিলের পাশে আমরা বালির ঘর তৈরি করি। পাখি সমস্ত পথ ওড়ে। হাওয়ার গল্পে বিষাক্ত হয়ে ওঠা শিশুখাদ্যে নেমে আসে আমাদের নির্লজ্জ ঈশ্বর। ফেনার ভেতরে তখনও কেউ তালাত মাহমুদের গজল গাইছে। 

সুর থেকে বিরক্ত চশমা খুলে নেয় মৃত সন্তানের রঙ। নিখোঁজ ট্রলারগুলি একে একে ফিরতে থাকে আমাদের মাছের কঙ্কাল নিয়ে। আমাদের ঘুম আসে না। ওষুধও আসে না কিছুতেই। 



No comments

FACEBOOK COMMENT