DEHLIJ

তুলসী কর্মকার

সওদা

তুলসী কর্মকার 

 


আকাশ দিকে তাকিয়ে আকাশ কিনতে ইচ্ছে হয়

চাঁদকে ধরে জ্যোৎস্না মাখতে চাই

রঙ বড় বেয়াদপ

মেঘেরা শয়তানের তুতোভাই

পর্দার আড়ালে বড়দার ফিসফিস 

আকাশ কার কাছে কেনা যায়? 

যেখানে একটা সূর্য আঁকা আছে

কলসির ভেতর রাখা আছে আলো 

ঝলমলিয়ে উঠছে অন্ধকার

তুমি বলছ আরও নীচে 

আমি তখন মাথা নীচু করি

তারা খসতে থাকে আপন খেয়ালে......





রেখাচিত্র 


পায়ের নিজস্ব একটা প্রতাপ আছে। যতবেশি পা একই দিকে চলে যায় ততবেশি রেখা প্রকট হয় যা ক্রমশ পথ হিসেবে পরিচিতি পায়। পথের ধারে কতশত সংকেত জমতে থাকে। সমীকরণ আঁকে মন। সুদূর বন। গাছেরা হাওয়ার তালে গা দোলায়। সকাল দুপুর রাত তোয়াক্কা না করে পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। সৃষ্টি ধ্বংস লীলা চলে। ওইদিকে কয়েকজন মেয়ে কাঠ কাটে। জ্বালানি হিসাবে কিছু পয়সা অর্জন করে। ব্যাচকুল বনবেলা রকমারি মাশরুম সময়মতো পাওয়া যায়। মহুল বাদাম শাল নিমের মনোহারী বন। কিছুকিছু গাছ বেশ বয়স্ক। এক একটা গাছের তলা খুব পরিষ্কার। পলিথিন খবরের কাগজ সোডার বোতল দেখলেই মনে হয় এখানে মানুষের নিয়মিত যাতয়াত আছে। কিছু ঝোপ আবার এতো নিরিবিলি ও ছায়াময় যার পাশে নিরোধকে বেসামাল অবস্থায় দেখা যায়। শিহরণ বইতে থাকে। কোথাও গর্ত কোথাও শুকনো হাড়গোড় বুক ধক করে। ফাঁদ পাতা আছে। ভাবনা বাসা বাঁধে। চোখাচোখি হতেই এক শেয়াল গা ঢাকা দেয়।


প্রমোদ


ছাপোষা মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবার

গাং দেওয়ালে আলকাতরা লাগানো নেই

ঝিটচাল উড়ে গেছে অনেক আগে

মাসকাবারি মুনাফার অভাব

প্রায় সকালে হাঁড়িতে ফুটে ক্ষুদ চাল 

নুন লঙ্কা সহযোগে কোনক্রমে পেট ভরে 

কখনো সখনো ঝোল আলু এককুচি মাংস

গেল পুজোয় পিতলের কলসিটা বন্ধক দিয়েছে মা

জামা আর প্যান্টি কিনতেই ফুরিয়েছে টাকা

সকাল থেকে সন্ধ্যে আপন নিয়মে হয়

বটকা গন্ধের ভটকা কাঁথাটা বিছিয়ে দেয় দিদি

সাজানো হয় ছিট কাপড়ের গোটা আটেক বালিশ

তেল চিটচিটে বদন

এক এক করে সকলকে খাইয়ে অনেক রাতে শোবে মা

কোনদিন আধপেটা কোনদিন উপোস এই তার কপাল

লণ্ঠন জ্বলছে, আমি বোনের পাশে শোব 

বোন ঘুমিয়ে কাঠ

ছেঁড়া প্যান্টির ফাঁক ধরে আলো ঢুকছে

ঢাকা দেবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করছি

খুব কাছ থেকে দেখছি অনেক কিছু 

ছোঁয়া লাগতেই বোন একটু নড়ছে 

ঘুমের ভানে লজ্জায় সরে যাচ্ছি 

এভাবে কিছুটা সময় পার হয়

স্পর্শ করি গন্ধ লাগে তবু বার বার দেখি 

শোভাতে পুলকিত হতে থাকে মন

অভাব মাপতে মাপতে স্বভাব মাথাচাঁড়া দেয়



মিথোলজি

লাল হয়ে আছে বিকেল

বাঁশের মাচা কুচো-লঙ্কা বিটনুন

পাতা-খালায় ভিজে ছোলা 

খুরি আর মহুয়া ক্যান 

আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমি 

প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে আসছি


হাত বুলিয়ে দেখিয়ে দিলে মা


তার আগে?


ক্ষণিক চুপ থেকে বাবার দিকে তাকানো

বাবা নিরুত্তর


শিকড়ছেঁড়া একটা আমি তখন বিদ্রুপ করে

নেশা নাব্যতা হারাতে হারাতে

গাছ নড়ে রস পড়ে

গ্যাঁজানো গর্জন ফুলে ওঠে 

ফল প্রকাশ ক'দিন পর




No comments

FACEBOOK COMMENT