DEHLIJ

অলোক বিশ্বাস

কাকে বলে আমার দেশ

অলোক বিশ্বাস



এতগুলো ধর্ষণের পরেও কেঁপে উঠলো না দেশ। যেদিকে চিড়িয়াখানা, সেদিকে তো বেশ ভিড় । সুইমিং পুলের কাছে পা রাখার জায়গাও নেই। দেশ আরো দেশ সহকারে বিশ্ব সম্মেলনে মেতে উঠছে। ভালো কোরে বলতে পারছো না, এ দেশ তোমার। ভালো কোরে বলতে পারছি না, এ নদী আমার, এই আমার ছোটবেলার সোনাঝুরি। দেশ আরো দক্ষতা অর্জন কোরছে বিজ্ঞাপনী সিদ্ধান্তে, অপভাষায়...

##

কিছু বোঝার আগেই হাততালি দিয়ে যাচ্ছে দেশ। রামায়ণে কী কী লেখা, মহাভারত ও কোরানে কী কী লেখা, ঝরঝর কোরে মুখস্থ বলে লোকেরা। খবরের কাগজ খুলতেই আরো একজন নুসরাত ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। পাশেই  বিজ্ঞাপন, দুটো ব্রা ও প্যান্টি কিনলে আরো দু'টো ফ্রি। বিজ্ঞাপন আর ভোট পাগল লোকেরা ভুলে যায় কিভাবে নুসরাতকে ধর্ষণ করা হয়েছে...

##

ধর্ষণের পর আবার ধর্ষণ আসে। ধর্ষণের উৎসব লেগেছে। সন্ত্রাসে ভস্মীভূত হয়ে যায় প্রতিবাদী মানুষের ছোট ছোট বাড়ি। প্রতিবাদী কর্নারে অনর্গল ইট ছুঁড়ছে কেউ। নত হয়ে আছো ভালোবাসা।  ঘুম থেকে উঠে আরো গভীর ঘুমের কাহিনি শোনাচ্ছে আমার দেশ, তোমার দেশ।  ভোটের উৎসবে খাটো হয়ে যায় গণতন্ত্র। দেশ বলছে আরো মদ ঢালো, আরো ধর্ম খাও, আরো বরফের ভাষা শেখো...



ইতস্তত  


কিছু বলতে চাও। ইতস্তত করছো। কেন। যদি বলতেই চাও, ইতস্তত কেন। কোন টবে কোন গাছ। কোন স্টেশনে ভাগীরথী এক্সপ্রেস। সেক্টর ওয়ান নাকি সেক্টর টু-তে মজেছে প্যারা-টিচার। কেন দ্রুত ছেঁড়ে শক্ত মাদুলি। কেন অপ্রত্যাশিত রূপে আসে বৃহস্পতিবার। ব'লে ফেলো। ব্রিজ খোলা। ভ্যাকুয়াম মেশিন আছে। মলম ও প্যাথলজি আছে। সমস্ত প্রকার মশলার কৌটো গোছানো।  এমনকি অব্যবহৃত ভার্জিন। যেকোনো অবলম্বন ধ'রে বলো হৃদয়ে কী প্রকারের বাঞ্ছা রেখেছো। যতো বেশি সময় নষ্ট কোরবে, দাঁত এবং ঠোঁটের জাহ্নবী খোয়াবে। মাতালের সামুদ্রিক হৈচৈ মাত্রা ছাড়াবে। ইতস্তত কোরলেই ছড়াবে আরো ভাইরাস। এমনকি যতটুকু অধিকার যুদ্ধের পূর্বে টিকে থাকে, তাও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বলো না রে ভাই, কিভাবে নদীগুলো ড্রেন হয়, কিভাবে রাজধানীতেই ধর্ষিত হয় কলেজ বালিকা, কিভাবে গণতন্ত্রকে উলঙ্গ কোরে ভাইরাস মাখানো হয়। বলো রে ভাই বলো, কোন গানে পোকা। কোন দুধে বিড়াল। কোন স্তনে পাথর জমেছে। শ্রাবণ মধ্য গগনে যখন, বৃষ্টি হয় না কেন প্রিয়....



মানচিত্রের কথা


মেঘের সঙ্গে খেলতে খেলতে সালভাদোর দালি হেঁটে যান। পিকাসো আর অবন ঠাকুর আমাকে দিয়েছেন মেঘের নতুন মেল আইডি। কাল্পনিক সন্ত্রাসের ভেতর অন্য তুলিতে আঁকা। শিমুল আর পলাশের ছবিকে অন্তর্লীন সিগনেচারে দেখে হৃদয় থেকে ধুয়ে ফেলি কার্বনমাখা রুমাল আর জামা।  পিকাসোর ক্যানভাস যে কোনো সময় ঢুকে পড়ে যেকোনো বাসায়।

কারখানায় উৎপাদিত বাঘের প্রতিকৃতির ওপর পায়রা ওড়াচ্ছেন পিকাসো। অক্ষরের সঙ্গে রঙের সাম্যকথা বলতে বলতে  অবন ঠাকুর বৃক্ষের ভেতরে

বাগেশ্বরী আঁকছেন। সেলিমের চা-দোকানে হৈচৈরৈখিক টোপোগ্রাফিগুলো দালি ও আমাদের একাত্ম করে। পিকাসো দেখতে চান আমাদের রহস্যের অদ্ভুত উৎসগুলো আর পদ্মা নদীতে কিভাবে প্রীতিময় হয় নৌকোরা। দরজার বেল বেজে ওঠে। ভোরের দরজা খুলতেই দেখি, সম্মুখে দাঁড়িয়ে বিমূর্ত পিকাসো, দালি আর অবন ঠাকুর। পিকাসো নিজ হাতে শাহবাগ নামক প্রতীকের ঘরে কফি বানান। রঙ দিয়ে লেখা স্বাধীনতা ঝ'রে পড়া দেখি শস্যহীন ঊষর জমির উপর...

No comments

FACEBOOK COMMENT