DEHLIJ

মানিক বৈরাগী

পুড়ে চুরুট জ্বলি আমি

মানিক বৈরাগী



জেগে থাকি রাতভর, আশায় আশায়

কুয়াশাভোর, পোড়া তামাকের গন্ধমাখা হিমেল বাতাস

ধীরে ধীরে কুয়াশার যোনি ভেদ করে আলোর কোলাহল

পাখির কলরোলে দিনমণি ধীরে ধীরে জাগে মানুষপ্রাণী

গন্ধরাজের সুভাষ নিতে  ভ্রমর গুঞ্জরিছে ফুলমালি আসে

সবিতার কিরণে সবিতা আসেনি।


পূর্ব দিগন্ত রেখায় অলৌকিক রঙমহলে হাসির ফোয়ারার হলাহল

ভোর কুয়াশায় কি অদ্ভুৎ সুন্দর অপসারী হাসে

সবিতা তুমি কি তেমন হাসো কুয়াশার আলো-আঁধারে? 

আশায় আশায় পুড়ে যায় চুরুট, জ্বলে যাই আমি

এভাবেই আলোকিত অন্ধকারে ঘুমিয়ে পড়ি।


বৈশাখে


বৈশাখের ছাদখোলা আকাশে

মেঘের দরোজায় তুমি দাঁড়িয়ে থেকো।

আগামী বৈশাখে

খোলা রোদে ভিজবো, দখিনা বাতাসে

এসো, আসবে কিন্তু।


তারপর

তপ্তমরুর রুদ্রতায় রুক্ষবক্ষে তোমার দিকে

বজ্র হয়ে টোকা দিবো তোমার দরজায়

মেঘেদের চিলেকোঠায় অপেক্ষায় থেকো

থাকবে তো

আমার

জং ধরা কলকব্জা তুমি মেরামত করে দিবে

যেন ঝড়োহাওয়ার বৃষ্টির দাপটে

জং খাওয়া দেহ, মুহুর্তেই যেনো ঝুরঝুর ঝরে না

যায়।

পারবে তো বৈশাখী মেঘকুমারী।

অতঃপর

প্রান্তরজমিতে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের গায়ে ক্ষতের

দাগ

টিনের চালে জলনৃত্য মঞ্চস্থ হচ্ছে বাঁজ পড়ছে

অবিরাম

বাতাসের শীৎকার ধ্বনিতে থরথর কাঁপছে

বৈশাখী

তার কাঁপনে জড়িয়ে ধরে বজ্র

মেঘ বজ্রের কামলীলায় অঝর ধারায় ঝরে যায়

বৃষ্টি।



বেহেস্তি খোয়াব


মা যখন পোয়াতি আছিল তখন বাপ মইরা গ্যাছে

নানির মুখে হুনছি আমারে বিয়োনের লগে মইরা 

গ্যাছে মা

নানি তোলাদুধে, ভাতের ফেন জাউ খাইয়ে ডাঙ্গর

কইরছে

মায় নানিরে অছিহত কইরা গেছে এতিমখানায় দিয়া

হাফেজ আর মলই বানাইতে।


নানা মইরা নানি এখন একলা রাড়িবেড়ি

এ বাড়ি ও বাড়ি ঝিয়ারী করে খায়

আমি যহন আস্তে আস্তে ডাঙ্গর হইতাছি

বাপের লাহান চেহেরা - ছুরত টুকটুকে লাল

নাদুসনুদুস দেহের গড়নে দৌড়াদৌড়িতে পাড়া

মাথায় তুলি

একদিন এক হুজুর আইসা নানির লগে হাদিস

কোরানের বয়ান দিল

বয়ান হুইন্না নানির চোখে পানি আইলো

নানি আমায় সোনারূপার পানি দিয়া গোসল দিলো।


তারপর আমার জামাকাপড় গাট্টি বাইন্ধা হুজুরের

হাতে দিয়া কইল, নাতিরে আমার

কোরআনে হাফেজ বানাইয়া দিও

মরনের পরে যাতে নাতি আমার জানাজা

পড়াইতে পারে

হাসরের ময়দানে সে-ই তো আমার বেহেস্তের লাঠি।


কিন্তু কে জানিত হায়

নানির খোয়াব বেহেস্তের হাউস দুনিয়াতে মইরা যাবে !

একদিন গভীররাতে আমার ঘুমঘোরে

দাঁড়িওয়ালা হুজুর দৈত্যের লাহান

আমার উপর হামলে পড়ে।


পায়ুকামী নূরানী হুজুর

তার ঈমানিদণ্ড সমেত আমার পায়ুর সরলপথে

ঘোষণা দিতাছে স্রষ্টার অপার মহিমা

মাঝে মাঝে জেহাদ জেহাদ আওয়াজ তুলে

আমারে রক্তাক্ত করে তিনি হলেন মহাকালের গাজী

আর আমি বেহেস্তের গেলমান হইয়া

সুরাবন তহুরার পাত্র হাতে লইয়া ঘুরি। 


এদিকে নানি আমার কবরে কাঁদতে কাঁদতে

হয়ে গেল জনম উম্মাদিনী।


দ্যাশ থেকে  ড্যাশ


মন যদি খারাপ হয়  তোমার জন্যে

দেহ যদিও খারাপ রাজনীতির জন্যে

দ্যাশের জন্যে আমি কি করেছি,ভাবছি

লুটে -পুটে চেটে -চুটে খাচ্ছি

দিবস এলেই দায় এড়াচ্ছি।


আহ, আসলেই তাঁরা বেকুব,তাই নয় কি?

দ্যাশে থেকে তাঁরা নির্বোধের মতো জীবন দিলো

অথচ

দেশান্তরে,দিব্যি ঘুরে ফিরে ক'টি অনুষ্ঠান সেরে নাম কুড়িয়েছি,বাম কুড়িয়েছি,জাতীয়তাবাদী হয়েছি।


ধুর মিয়া আজ ক'প্যাগ গিলেছেন,যত্তসব রাজাকারি কথা ক'ন

এসব আমারে কইতে আহেন ক্যান।


আরে দরিদ্র কবি

পেটে ভাত নাই,চুলায় তেল নাই

চেতনায় ঠন ঠন,মরমি সম্মানের ডুগডুগি বাজান

শুনেন,আপনাগো লাহান কত সুশীল দেখেছি

কলাম কবিতা দিয়ে টাকা নিয়ে শহীদ মিনারে

চেতনার খই ফুটিয়ে, রাতের জলসায় সরি বলে!!


আপনার প্রেসার ডায়বেটিস পারেন না বলে,সৎ চুদান

এসব করতে গেলেও কপাল লাগে, হেডাম লাগে মিয়া

আপনাদের কপাল তো কাদিরা ফাটি দিছে, কি করবেন


"হে দরিদ্র " অ গো শহীদ পিতা

আমার দ্যাশমাতা, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

আমি মুক্তির বাচ্ছা,এটাই আমার কলরব, গৌরব

তোরা লুটে-পুটে খা,বিলয় মোর সাধনা।


কষ্টকানন


আমি তো দুঃখেরই  দুর্বৃত্ত

কষ্টযন্ত্রের ফলায় দুঃখের জমিনে

যন্ত্রণার  চাষকরি বেদনা ফোটাবো বলে

দুঃখের চুল্লিতে পুড়ে পুড়ে কলিজা খানা

  ঝামাইট।

ঝামাইটে হয়না বাঁধন যায়না গড়া প্রেমের কানন।


অ কারিগর কি করি এখন

এ দেহমন যন্ত্রণারই  রসুইঘর।


না বুঝে না শুনে যারা  "নিন্দের কাঁটা বিধিল গায় "

তাদের তরে বলি ভণে

কষ্ট লাগে বড্ড কষ্ট লাগে

নষ্ট হতেও যোগ্যতা লাগে।



No comments

FACEBOOK COMMENT