DEHLIJ

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়ের একটি বিষণ্ণ ভালোবাসার গল্প

সমরেন্দ্র বিশ্বাস



কথাসাহিত্যিক মণিরত্ন মুখোপাধ্যায় ১১ই জুন ২০২১ নতুন দিল্লীর চিত্তরঞ্জন পার্কে তাঁর বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন। তার লেখা একটা গল্প ‘অনতি অতীত সংবাদ’। এই গল্পটাকেই এখানে আমি আলোচনার জন্যে বেছে নিচ্ছি। প্রয়াত সাহিত্যিক মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়ের প্রতি প্রকারান্তরে এটাই আমার শ্রদ্ধা নিবেদন।  


‘অনতি অতীত সংবাদ’ গল্পটিকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা দেখি, গল্পের প্রেমিক অফিসের একজন ‘বস’। তার কাঁচ ঘেরা অফিস ঘর, মুম্বাইএর এক তেরো তলা বিল্ডিংএর ন’তলায়। এই হাইফাই মানুষটির চেতনায় বার বার ঘুরে ফিরে আসে তার ফেলে আসা শৈশব ও কৌশোর কাল। সে ভুলতে পারে না তার গ্রামীণ জীবনসত্ত্বা। চোখ বন্ধ করলেই তার সামনে ভেসে ওঠে ইলগাজা গ্রাম, বক্রেশ্বর নদী, হারালপুরের কথা। যে সব অঞ্চলে আছে জলকাদার রাস্তা, ইলেক্ট্রিক নেই, যেখানে গোয়ালঘরের পেছনে জমিতে ওগানো হয় পালংশাকের পাতা।


গল্পের নায়কের নাম অভিষেক বসু। তাকে নিয়ে এই কাহিনীটা একটা বিষণ্ন প্রেম ও অতীত আত্মানুসন্ধানের গল্প হিসেবে জমে ওঠে। এই গল্পে দেখি, নিজের ফেলে আসা জীবনকে খুঁজে নিতে অভিষেক বসু তার মুম্বাইবাসী আধুনিকা প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের গ্রামে ঘুরতে আসে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই গল্পটি একটি মানুষের নিজস্ব গ্রামীণতাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার ও পুনরুদ্ধার করার কাহিনী।


অভিষেক বসুর শৈশব ও কৌশোর কেটেছে তার মাতুলালয়ে দাদু, দিদিমা, ভানুমামাদের সান্নিধ্যে। দাদু সনাতন রায় দেশভাগের আগে ছিলেন রংপুরের স্টেশনমাষ্টার। এপার বাংলায় এসেও তিনি যথেষ্ট সবল ও সক্রিয় - একটা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর ম্যানেজার। তার চার মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ের বড় ছেলে অভিষেক বসু, যিনি এই গল্পের নায়ক। অভিষেকের ঘরের ডাকনাম বসু। বসুর বাবার কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে অনবরত বদলীর চাকরী। এজন্যেই বসু মামাবাড়ীতে থেকে একটা স্কুলে পড়াশোনা করে। এভাবেই একটা গ্রামীণ পরিবেশে, একটা যৌথ পরিবারে বসুর বড় হয়ে ওঠা।


বসু পড়াশোনায় ভালো ছেলে। স্কুল কলেজের পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে শুরু হয় তার কর্মজীবন। তখন থেকেই গ্রাম জীবনের সাথে তার ছাড়াছাড়ি। সম্প্রতি চাকুরীসূত্রে সে মুম্বাইএর একটা কোম্পানীর চিফ কনসালট্যান্ট, অফিসের বস্‌।


একদিন বদলী হয়ে বসুর অফিসেই চাকুরীতে জয়েন করলো মেয়েটি। সে মুম্বাইএর একটা অভিজাত ডাক্তার পরিবারের সন্তান – নাম ইন্দ্রাণী সমাজদার। স্মার্ট ও সুন্দরী মেয়ে। অফিসে থাকাকালীন অল্প সময়ের মধ্যেই অভিষেক বসু আর ইন্দ্রাণীর মধ্যে একটা ভালোলাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।


অফিসে জয়েন করার মাস দুয়েক পরের কথা। বসু অবিবাহিত একা মানুষ। ইন্দ্রাণীর অফিসের বস। তা’হলে কি হবে, ইন্দ্রাণীই একদিন বসুকে ধরে নিয়ে গেল তার বাড়ি, মুম্বাইএর ভিলেপার্লে। সেখানে গিয়েই বসু জানতে পারে ইন্দ্রাণী ডিভোর্সী, বছর কয়েক আগে তার বিয়ে হয়েছিল এক ধনকুবের ও বিজনেসম্যান পরিবারে, যে ছেলেটি অন্যান্য মেয়েদের সাথে বেলেল্লাপানায় অভ্যস্ত। এটা ইন্দ্রাণী একদমই সহ্য করতে পারে নি। সাহসী মেয়ে ইন্দ্রাণী তার স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছিল; তারপর থেকেই তাদের সেপারেশন।


ইন্দ্রাণীদের ঘর, ডাক্তার পিতার অভিজাত পরিবার, তাদের পরিবেশ এসব তো বসুর বেশ ভালোই লেগেছিল। কিন্ত তা্র মনে বারবার ঘুরে ঘুরে আসতে লাগলো একটা প্রশ্ন। ইন্দ্রাণী কি অভিষেক বসুর ব্যাকগ্রাউন্ড, তার মানসিকতাকে মানিয়ে নিতে পারবে? এই দুটি মনের প্রেম সম্পর্কের মধ্যে এসে দাঁড়ায় বসুর বিবেক – লেখকের ভাষায় যার নাম ‘মানবক’।


বসু সব কিছুই খুলে বললো ইন্দ্রাণীকে। তার গ্রামের কথা। তার শৈশবের সঙ্গিনী দাঁতুর কথা। তাদের বাড়ীর চাকরাণী ও পাট-কুড়োনি মা’র মেয়ে দাঁতু, দাঁতগুলো যার উঁচু। এই দাঁতুকেই বসুর ভালো লাগতো। কেননা দাঁতুই ছিল তার অ্যাডভেঞ্চারের বাল্য সঙ্গিনী! বসু ইন্দ্রাণীকে আরো জানালো, তার গ্রামের মাঠ ঘাট পুকুর, চারপাশের এক হত দরিদ্র পরিবেশের কথা। তার গ্রামের মমতাময়ী সমস্ত মায়েদের কথা! ইন্দ্রাণীকে এই বলাটুকুই কি যথেষ্ট? শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়ে কতটুকুই বা বুঝতে পারবে বসুর ফেলে আসা জীবনকে?


একটা বিবেকের তাড়নাতে বসু ঠিক করে সে ইন্দ্রাণীকে নিয়ে তার নিজের গ্রামে যাবে। চাক্ষুষ দেখাবে সেখানকার জীবন। তাকে দেখাবে বসুর অতীত। এসব না জানলে অভিজাত পরিবারের মেয়ে ইন্দ্রাণী কি ভবিষ্যত জীবনে স্বামী হিসেবে বসুকে ঠিকঠাক মেনে নিতে পারবে?


   ইন্দ্রাণীও চাইছে তার প্রেমিকের গ্রামীণ জীবন নিজের চোখে একবার দেখে আসে। এজন্যেই প্লান করে ওরা মুম্বাইএর থেকে ফ্লাইটে কোলকাতায় এলো। সেখান থেকে এসি কারে করে ওরা দুজন পৌঁছে গেল রামপুরহাটে। সেখানে একটা সাদামাটা হোটেলের দুটো আলাদা আলাদা ঘরে তারা রাত্রি যাপন করলো। পরদিন সকালে সেখান থেকে তারা পৌঁছে গেল বসুর মামার বাড়ি – ইলগাজা নামক একটা গ্রামে। যেখানকার মাটিতে গেঁথে আছে বসুর শেকড়, তার ফেলে আসা কৈশোর।


কোথায় মুম্বাইএর বিলাসবহুল ব্যস্ত জীবন! আর কোথা এই অজ গ্রাম। মাটির রাস্তা। আলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথ। এই রাস্তায় ইন্দ্রাণী হাইহিলের জুতো পরে হাঁটছে, এবরো খেবরো রাস্তায় যে কোন সময়ে পা মচকে যেতে পারে। মাটিতে, মাঠের আলে, জলে কাদায় চলতে গিয়ে যে যন্ত্রণা - এমনি ভাবেই ইন্দ্রাণীর গ্রাম-জীবন সম্পর্কিত একটা প্রাকটিকাল পরীক্ষা চলছে। বসু ইন্দ্রাণীকে দেখাবে শান্তি কৈবর্ত’র মাটির বাড়ির উঠান, একচালা ঘরে সাজানো লটকনের দোকান, ছোট ছোট মাটির গামলা আর রংচটা কৌটার ভেতরে যাতাভাঙ্গা ডাল, গোটা ধনে আর সরষে, আরো নানা কিসিমের মুদিখানার জিনিষ।


একদিনের গ্রাম সফরে এসেছে ওরা। সেদিনই মামাবাড়ি ইলগাজা থেকে পায়ে হেঁটে তারা দুজন পৌঁছে গেলো অন্য আরেকটা গ্রাম হারালপুরে, যেখানে বর্তমানে বসুর মা আর ভাইরা থাকে। যেখানে শান্তি কৈবর্ত’র বউ ময়না মাসি থাকে। এভাবেই বসু ইন্দ্রাণীকে দেখিয়ে দিলো তার ফেলে আসা জীবনের অনেক কিছুই। এখানে বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় কাদামাটি ভেঙ্গে, হাতে দড়িবাঁধা শিশি ঝুলিয়ে তেল আনতে লোকেরা মুদিখানায় যায়। খড়ের আটির আগুনে মাটির উনুনে দুধ গরম হয়। ইলেক্ট্রিক না-থাকা গ্রাম, হাতের তালুতে ধরে থাকা প্রদীপের আলোয় মা-মাসিরা নতুন বউএর মুখ দেখে।


গল্পের সমাপ্তিতে দেখা যায়, ঘোরাঘুরি শেষ করে গ্রামের নিকষ কালো অন্ধকারে টর্চ ফেলে ওরা দুজন এসে বসেছে মাটিতে। একটা আলের উপর গা ঘেষাঘেষি করে দুজনে কথা বলতে থাকে। ইন্দ্রাণীও এই সংক্ষিপ্ত গ্রাম পরিভ্রমনের শেষ পুলকিত ও অভিভূত। এক সময়ে এই অন্ধকারে ইন্দ্রাণী তার প্রেমিকের কোলে মাথা রেখে মাটিতেই শুয়ে পড়ে। গল্পকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, ভবিষ্যতে যথার্থই সঙ্গী হিসেবে ইন্দ্রাণী মেনে নিতে পারবে অভিষেক বসুর জীবনকে ।


এই গল্পের মধ্যে মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়ের লেখায় কতগুলো বিশেষত্ব নজরে আসে। সেগুলো খুব সংক্ষেপে একবার দেখে নেয়া যাক।


১) গ্রামীণ জীবনের এক নিপুন বর্ণনা।


যেমন, গোয়াল ঘরের পেছনে পালং শাকের বীজ লাগাচ্ছে বসু’র দিদিমা, বীজ থেকে ‘প্যাঁক’ (চারা) বেরোতে দশ বারো দিন লেগে যায়। বাবলার কাঁটা দিয়ে ঘেরা হয় পালং শাকের ক্ষেত।


দাঁতুর সাথে বেড়াতে গিয়ে বসু দেখছে বিড়াল ছানা বাচ্চা দিয়েছে। মোড়লের মরা বাছুরটাকে শকুনে খুবলে খাচ্ছে।


গ্রামীণ জীবনের সাথে গভীর পরিচয় থাকার সুবাদে লেখক এইসব প্রত্যন্ত জীবনের ছবিগুলো অত্যন্ত নিপুনতার সাথে তুলে এনেছেন।


২) ছোট্ট ছোট্ট অভিনব ঘটনার বিবরণ।


দাদুর পরিবারে চার বোন, তাদের ছোট্ট একমাত্র ভাই। কে এই ভাইকে বেশী ভালবাসে? ছোট্ট বাচ্চাটাকে হিসি করিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে ওদের সবচাইতে ছোট্ট বোনটা এই প্রস্রাবকে গিলে দেখিয়ে দিয়েছিল, সে তার ছোট্ট ভাইকে সব চাইতে বেশী ভাল বাসে। কল্পনাতীত এই ঘটনাটি! ……   কিংবা আরেকটা ঘটনার ছবি


ইন্দ্রাণীর ডাক নাম পল্টন। সেটা সে সগর্বে সবাইকেই বলে থাকে। এই নামের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা যায় আরেকটা দুর্লভ ঘটনার কথা। তাদের বাড়ির পোষা কুকুর পল্টনের মৃত্যু হয়েছে, তার পরের দিনই ইন্দ্রাণীর জন্ম। এই মৃত কুকুরের নাম অনুসারে, বাবা-মার ইচ্ছে অনুসারেই, নবজাত মেয়েটার নাম হয়ে গেল ‘পল্টন’।


গল্পে বারবারই একটা অদৃশ্য চরিত্র উঠে এসেছে, যার নাম ‘মানবক’। এর কাজ যাত্রা দলের বিবেকের মতো। এখানে মানবক হচ্ছে লেখকের বিবেক। সে নানা পরিস্থিতিতে যখন তখন এসে পরিচালিত করেছে বসুর চিন্তা চেতনাকে। ‘মানবক’ এর আবির্ভাব ও তার কথাবার্তা এই গল্পে যথেষ্ট ব্যতিক্রমী দৃশ্যসমূহ নির্মাণ করতে পেরেছে।


গল্প বয়ণের মধ্যে এসব ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা, দৃশ্য, বর্ণনাগুলোকে যথেষ্টই ব্যতিক্রমী মনে হয়।


৩) একই পরিসরে গ্রাম ও শহরের সফল চিত্রায়ণ।


গল্পের মূল পটভূমি গ্রাম হলেও গল্পকার শুধু গ্রামের জীবন ও সংস্কৃতির মধ্যে আটকে থাকেন নি। তিনি স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়িয়েছেন স্মার্ট শহর-জীবনেও। গল্পের বিভিন্ন ঘটনা ও স্মার্ট শব্দ নির্মাণে তার প্রমাণ মেলে।


শহুরে মেয়ে ইন্দ্রাণী তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলে, সে ‘মুম্বাইএর প্রোডাক্ট’। ইন্দ্রাণী মুখের ভাষায় গ্রাম্য বসুর ‘গার্ল ফ্রেন্ড’এর নাম দাঁতু।


ডাক্তার সামাজদার যখন তার মেয়ে ইন্দ্রাণীর সম্ভাব্য বরের মুখোমুখি হন, তখন তিনি শহুরে মানুষদের মতোই এই দুজনের মধ্যকার ‘ইকুয়েশন’টা বুঝে নেন।


ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামীর বাড়ীতে ‘ইনকাম ট্যাক্স রেইড’ এর কথাও এই গল্পে উল্লেখিত হয়।


এইভাবেই অতি কুশলী মাঝির মতো এই গ্রামীণ গল্পের পরিসরে গল্পকার মনিরত্ন সফল ভাবে তুলে আনেন স্মার্ট শহরের পরিবেশ ও আবহ।


৪) মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী ও ছিন্ন শেকড়ের খোঁজ।


আলোচ্য প্রেমের গল্পটি চিনে বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে, প্রেমিকার শরীরের স্পর্শ নিতে নিতেই সিনেমা হলে সমাপ্ত হয়ে যাবে – এরকমটা মোটেই নয়।


লেখক বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দুটো প্রেমের সার্থকতা তখনই হবে, যুগল জীবনে পথ চলা তখনই আনন্দময় হয়ে, যখন ছেলে আর মেয়েটার দৃষ্টিভঙ্গীতে সাযুজ্য বা মিল থাকবে।


বসু তার পুরোণো শেকড়ের খোঁজে এজন্যেই ইন্দ্রাণীকে নিয়ে গিয়েছে তার গ্রামে, তারা দুজন গ্রামের পথে পথে পায়ে হেঁটে ঘুরেছে। নিজস্ব পুরোণো শেকড়কে কোনো মানুষ কি অস্বীকার করতে পারে? ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী, চিন্তা চেতনা তো মানুষ তার অতীত থেকেই সংগ্রহ করে।


প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর এই দৃষ্টিভঙ্গীগত মিলের প্রশ্ন, লেখক এই গল্পের অনেকটা জায়গা জুড়ে বার বারই তুলে এনেছেন।


৫) এই গল্প কি লেখকের নিজের জীবনেরই এক ছায়ারূপ?


    ‘অনতি অতীত সংবাদ’ গল্পে বারবারই ঘুরে আসে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা। লেখক মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়ের আদি নিবাস বীরভূমে, জন্ম মুখুড়িয়া গ্রামে, পড়াশোনা ওই জেলারই সিউড়িতে। তার আসল নাম প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি একজন ইঞ্জিনীয়ারও। প্রথম জীবন গ্রামে কাটলেও চাকুরী সূত্রে তিনি বিভিন্ন শহরে ঘুরেছেন ও থেকেছেন।


গল্পের নায়ক অভিষেক বসুর জীবনেও আমরা খুঁজে পাই গ্রাম ও শহরের মধ্যে মেলবন্ধনের একটা আন্তরিক আকুতি। মণিরত্নবাবু জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় নতুন দিল্লীতে কাটলেও তিনি ভুলে থাকতে পারেন নি তার নিজস্ব গ্রাম বাংলাকে, ভুলে থাকতে পারেন নি বীরভূমকে। এই গল্পের একটা বিরাট পরিসর তাই বীরভূমের পটভূমিতেই লেখা। মানুষের অতীত জীবন তো তার লেখাতে ছায়া ফেলবেই। এই গল্পও সেটাই প্রমান করে গেছে।


মণিরত্ন মুখোপাধ্যায় দেশ, সানন্দা সহ বিভিন্ন নামী ও অনামী পত্রিকাতে লিখে গেছেন। তার গল্পের সংখ্যা প্রায় পাঁচশোর মতো। তার এই একটি মাত্র গল্প- ‘অনতি অতীত সংবাদ’- সবাইকে বুঝিয়ে দেবে, তিনি একজন শক্তিশালী জাত গল্পকার। কাহিনীকে তিনি ধরে রাখতে জানেন।


একজন গল্পকার হিসেবে তার যতটা প্রচার পাওয়া উচিত ছিল, বহির্বঙ্গে বসবাস করার কারণে, তিনি হয়তো সেই ঈপ্সিত পরিচিতি লাভ থেকে কিছুটা বঞ্চিত হয়েছেন। তবে আগামী লেখালেখির দুনিয়া নিশ্চয়ই নির্মোহভাবে লেখক মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়কে সবার সামনে তুলে ধরবে। তিনি তার মৃত্যুর পরেও নিশ্চয়ই বারবার ফিরে আসবেন সর্বজন সমক্ষে। তিনি বেঁচে থাকবেন ব্যাপক জনমানসে, আমাদের বাংলা সাহিত্যের পরিচিত আঙ্গিনায়।

            
























No comments

FACEBOOK COMMENT